প্রচলিত ভুল পর্বঃ১


 ★প্রচলিত ভুল

√"স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত"


আমাদের সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে যে "স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত"। মুখে মুখে যেমন এ কথা প্রচলিত; পাশাপাশি সাহিত্য, নাটক, সিনামাতেও এই কথাটা ধর্মীয় মোড়কে প্রচার করা হয়ে থাকে। কুরআন ও হাদীসে উক্ত বাক্যটির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। এই কথাটিকে হাদীস হিসাবে উল্লেখ করলে তা মিথ্যা কথা হিসাবে সাব্যস্ত হবে।


হাদীসের আলোকে আমরা জানতে পারি, শরীয়ার মধ্য থেকে স্বামীর আনুগত্য করা একজন স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব। স্বামীর প্রতি ভাল আচরণ বা খারাপ আচরণের সাথে স্ত্রীর জান্নাত জাহান্নামের প্রশ্ন জড়িত। কারণ এ বিষয়টিও হাদীসে এসেছে।


কিন্তু "মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত" এই হাদীসের অনুকরণে "স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত" এই কথাটি বলা যাবে না। এ শব্দ-বাক্যে কোনো হাদীস পাওয়া যায় না। সুতরাং এটিকে হাদীস হিসেবে বলা যাবে না। তবে কিছু বর্ণনায় এর মর্মার্থ পাওয়া যায়।


মুআত্তা মালেক, মুসনাদে আহমাদ, মুসতাদরাকে  হাকেমসহ হাদীসের আরো কিছু কিতাবে বর্ণিত হয়েছেঃ


একবার এক নারী সাহাবী রাসূলের কাছে এলেন নিজের কোনো প্রয়োজনে। যাওয়ার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি স্বামী আছে? তিনি বললেন, জী, আছে। নবীজী বললেন, তার সাথে তোমার আচরণ কেমন? সে বলল, আমি যথাসাধ্য তার সাথে ভালো আচরণ করার চেষ্টা করি। তখন নবীজী বললেন, হাঁ, তার সাথে তোমার আচরণের বিষয়ে সজাগ থাকো, কারণ সে তোমার জান্নাত বা তোমার জাহান্নাম। মুআত্তা মালেক, হাদীস ৯৫২; মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩৪১ হাদীস ১৯০০৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২৭৬৯; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ১৪৭০৬


স্বামী-স্ত্রীর একের উপর অন্যের হক রয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে মৌলিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,


وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ.


আর স্বামীদের যেমন তাদের (স্ত্রীদের) উপর ন্যায়সঙ্গত হক রয়েছে, তেমনি তাদেরও হক রয়েছে স্বামীদের উপর। সূরা বাকারা (২) : ২২৯


আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিস্তারিতভাবে স্বামী-স্ত্রীর  হক তুলে ধরেছেন এবং স্বামীদেরকে স্ত্রীর হক আদায়ের ব্যাপারে সতর্ক  করেছেন। বিদায় হজ্বের ভাষণে নবীজী বলেছেন,


اتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ.


তোমরা নারীদের  বিষয়ে আল্লাহকে ভয় কর।

(সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২১৮)


সাথে সাথে নারীদেরকে স্বামীর আনুগত্য করার প্রতি উদ্বুদ্ধ  করেছেন এবং এর ফযীলতও বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত  নামায ঠিকমত আদায় করবে, রমযানের রোযা রাখবে,  আপন লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে,  স্বামীর আনুগত্য করবে তখন সে  জান্নাতের যেই দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ ইবনে হিব্বান,  হাদীস ৪১৬৩)


সুতরাং গুনাহের কাজ নয় এমন বিষয়ে  স্বামীর আনুগত্য জরুরি। কিন্তু  ‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত’ এটি হাদীস নয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post