এরপরের কাজ ছিলো প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যতগুলো গল্প আর কবিতা আছে, সবগুলো এক টানা পড়ে শেষ করে ফেলা।
মলাটের জন্য আম্মুকে আমি সব বই দিলেও বাংলা বইটা দিতাম না। বাংলা বই এর মলাট হতো সবার পরে। এবং মলাট করার আগেই বাংলা বইটা একবার পড়ে শেষ করে ফেলতাম।
সৈয়দ মুজতবা আলীর রসগোল্লা গল্পটার কথা মনে পড়লে এখনও মুচকি হাসি চলে আসে। কল্পনায় দেখি, সত্যি সত্যিই এক বৈদেশির নাকে থ্যাবড়া করে লাগানো রসগোল্লার দৃশ্য।
অভাগীর স্বর্গ, মহেশ আর ছুটি। শরৎ আর রবি ঠাকুরের তিন অসাধারণ সৃষ্টি। গল্প আলাদা, অথচ অনুভূতি একই। এসব গল্প পড়েও ফটিক বা অভাগীর জন্য দুই দন্ড চোখের জল ফেলেনি, এমন কেউ আছে বাংলাদেশে?
আর থাকতো মরুভাস্কর। এস ওয়াজেদ আলীর কলমে চলে আসতো নবিজীর জীবন। আহারে!! ধর্মের বই এর প্রতি আগ্রহ কোনকালেই ছিলো না। অথচ মরুভাস্কর গল্পটা কী আগ্রহ নিয়েই না পড়তাম আমি!!
শেষবার বাংলা বই পেয়েছিলাম ইন্টারে। এবং ঐবারও আমার রুটিনে কোন পরিবর্তন হয় নাই। সবার আগে বাংলা বইটা খুলে পড়ে ফেলেছিলাম সব গল্প আর কবিতা।
ঐ শেষ। এরপর আর কখনোই শীত বিকেলের রোদে বসে আমার বাংলা বই পড়া হয় নাই।
আমার জীবনে বাংলা বই ছিলো বিশাল একটা আনন্দের নাম। এখন কোর্সের পর কোর্স আসে, বছরের পর বছর আসে, বাংলা বই আর আসে না। এতো আগ্রহ নিয়ে কিছু পড়াও আর হয় না।
একটা টাইম মেশিন থাকলে, এই জীবনে আর একবার ঐ নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন চকচকে রঙিন বাংলা বইটা নিয়ে পড়তে চাইতাম। আর কিছু চাইতাম না।
Post a Comment