আমাকে ভালোবাসলে না কেন বাবাই দা?


পরিণীতা মুভিটা দেখার পর মেহুর মতো আমার মনেও সেইম প্রশ্নটাই আসলো, আমাকে ভালোবাসলে না কেন বাবাই দা? মুভি দেখা শেষেও এই প্রশ্নটা আমার মাথা থেকে বের হয় নাই। পুরাই সেই ইন্টারেস্টেলার মুভির মতো, মুভি দেখার অনেকক্ষণ পরও আমি এই প্রশ্নের রেশ থেকে বের হতে পারি নাই। 

মেহুলের আসলে কম কী ছিলো? সে দেখতে সুন্দর ছিলো, তার ক্যারেক্টার ভালো ছিলো, তার মায়া ছিলো, সুন্দর করে কথা বলতো, সুন্দর একজন ফ্যামিলি পার্সনও ছিলো। আর সে বাবাইকে অসম্ভব ভালোবাসতো। অসম্ভব মানে অসম্ভব। তো, একজন বাঙালী মেয়েকে যে যে গুনের কারণে ছেলেরা পছন্দ করে, তার সবটাই মেহুলের ভেতর ছিলো। তারপরেও বাবাই কেন ওকে পছন্দ করলো না? ভালোবাসলো না? এইখানে হিউম্যান সাইকোলজির খুব ডার্ক একটা জিনিস সম্ভবত মুভিতে আমাদের দেখানো হইসে। সেইটা হলো, বাবাই এর সব ছিলো। খালি দুর্বোধ্যতা ছিলো না। মিথ্যা ছিলো না। কমপ্লেক্সিটি ছিলো না। এবং মেহুলের কোন মুখোশ ছিলো না। বাবাই এর কাছে এসে সে একেবারে পানির মতো গলে যাইতো, অকপটে নিজেরে প্রকাশ করতো এবং সে যে বাবাইরে সবকিছু দিয়ে চায়, এইটা লুকানোর কোন চেষ্টাই মেহু করে নাই। মেহুলের এই সিমপ্লিসিটিই বাবাই এর কাছে অ্যাভেইলেবলিটি হয়ে গেসে, সস্তা হয়ে গেছে। বাবাই সম্ভবত প্রেমকে খুব আকর্ষণীয় এবং ফ্যান্সি কিছু মনে করেছিলো, সে বিশ্বাস ই করতে পারে নাই, মেহুর মতো সহজ এবং সাধারণ একটা মেয়ের মধ্যেও এমন আকাশ পরিমাণ ভালোবাসা থাকতে পারে। পুরুষের ভেতর এই সমস্যাটা আছে। তারা চায় চেজ করতে। কষ্ট করে অর্জন করা কয়লার মধ্যে পুরুষের যে আনন্দ, পড়ে পাওয়া ডায়মন্ডে পুরুষ সেই আনন্দটা পায় না। তো বাবাই এর কাছে সেই অ্যাডভেঞ্চারাস ডায়মন্ড মেহুল হতে পারলো না, হয়ে গেলো সায়ন্তিকা। মজার ব্যাপার হলো, বাবাই সায়ন্তিকার কাছে যে ভালোবাসাটা চাইসে, মেহুল তারচে বেশি ভালোবাসা বাবাই এর জন্য নিয়ে প্রস্তুত ছিলো। বাট বাবাই এর কাছে ঐ ভালোবাসাটা যথেষ্ট মনে হয় নাই। তো, এই যে ভালোবাসারে আমরা সবসময়ই অসাধারণ ফ্যান্সি, দুর্বোধ্য কিছুর মধ্যে খুঁজতে যাই, সমস্যাটা সম্ভবত এখানেই। খুব সাধারণ এবং খুব সহজের মধ্যেই যে অসাধারণ ভালোবাসা লুকাইয়া থাকতে পারে, বাবাইরা এ কথা ভুলে যায় বারবার। তাই বাবাইরা সবসময়ই ভালোবাসার খোঁজে হাসফাস করতে করতে ভুল মানুষের পিছে ছুটতে থাকা, আর মেহুলেরা আবার সেই আকাশ সমান ভালোবাসা নিয়ে বাবাইদের পেছনে ঘুরতে থাকে। কেউ কারো নাগাল পায় না। কারো সাথে কারো দেখা হয় না। 

একটা সময় এই সাপলুডু খেলা শেষ হয়। বাবাই ক্লান্ত হয়ে মরে যায়। আর মেহু তখনও এক আকাশ সমান ভালোবাসা হাতে নিয়ে ছলছল চোখে প্রশ্ন করে, আমাকে ভালোবাসলে না কেন বাবাইদা? প্রশ্ন প্রশ্নই থাকে। উত্তর এই জীবনে আমাদের আর জানা হয় না। বাবাই আর মেহুর দেখা হলে হয়তো পৃথিবীটা আর পৃথিবী থাকতো না, স্বর্গ হয়ে যেত। পরকালের স্বর্গের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই হয়তো বিধাতা এই মাটির পৃথিবীতে মেহুদের সাথে বাবাইদের মিলতে দেন না!!কে জানে?

Post a Comment

Previous Post Next Post